সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের (ববি) সদ্য বিদায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির বেশ কয়েকটি আদেশের চিঠি নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বিশ্ব বিদ্যালয় প্রশাসনে। নিয়ম বহির্ভুত আদেশের ঐ চিঠি নিজ দূর্নিতী ও অনিয়ম ঢাকতেই প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া চিঠি প্রদানে কৌশল অবলম্বন করেছেন ভিসির রুটিন দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার অধ্যাপক একেএম মাহাবুব হাসানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত সহকারী রেজিস্ট্রার সোলায়মান খান। কারন দর্শানোর চিঠি আটকে রেখে জবাবের সুজোগ না দিয়ে নির্ধারীত সময়য়ের পরে নির্বাহী প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতী দেয়ার অভিযোগও উঠেছে এই সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ভিসি প্রফেসর ইমামুল হক থাকা অবস্থায় তার সেচ্ছাচারিতার কারনে বিশ্ব বিদ্যালয়ে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরী হয়। এতেকরে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ছুটিতে থেকে তিনি বিদায় নেয়ার পর এই গ্রুপিং আরো তীব্র আকার ধারন করে। রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক একেএম মাহাবুব হাসান বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে নতুন করে আরেকটি জোট তৈরী করেন। যারা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানীর শিকার করে। যারাই এই জোটের কোন অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছে তাদেরকেই ট্রেজারার মাহাবুব হাসানকে ব্যবহার করে হয়রানী করা হয়েছে। এখতিয়ারভুক্ত না থাকার পরও সর্বশেষ বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে পদন্নতী, বদলী ও সাজা প্রদান করে যান মাহাবুব হাসান। আর সেই আদেশের চিঠি পৌছানো হয় ট্রেজারার চাকরী থেকে বিদায় নেয়ার পর।
জানা গেছে, ট্রেজারারের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির বরাত দিয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার সোলায়মান খান নির্বাহী প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদনকে দুটি বিষয়ে কারন দর্শানোর জন্য সাত দিনের সময় দিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেন। তবে তিনি চিঠির বিষয়টি গোপন রেখে ৭ কার্যদিবস শেষ হলে গতকাল ১৩ অক্টোবর তার কাছে অফিসিয়ালভাবে পৌছাইয়ে দেন। অন্যদিকে আরেক কর্মকর্তাকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে এই নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত ২ অক্টোবর আরো একটি চিঠি ইস্যু করেন সহকারী রেজিষ্টার সোলায়মান খান। ঐ চিঠিতে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির আদেশে মুরশীদ আবেদীনকে তার দাপ্তরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। তবে এই চিঠিটিও গতকাল রোববার (১৩ অক্টোবর) তার কাছে পৌছান ওই সহকারী রেজিষ্টার। যা সম্পূর্ন উদ্যেশ্য প্রনোদীত বলে মনে করেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্ম-কর্মচারীরা। কেননা গত ৭ অক্টোবর দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার অধ্যাপক একেএম মাহাবুব হাসান চুক্তি শেষ হওয়ায় তার দায়িত্ব থেকে বিদায় নেন। তিনি থাকা অবস্থায় আদেশ দিলেও সেই চিঠি পৌছানো হয় তার বিদায়ের এক সপ্তাহ পর। একই ভবনের মধ্যে রেজিস্ট্রার ও নির্বাহী প্রকেীশলীর দপ্তর হলেও চিঠি পৌছাতে সময় লাগল প্রায় দুই সপ্তাহ। অন্যদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেকশন অফিসার জসিম উদ্দিনকে অর্থ দপ্তর থেকে বদলী করে হল শাখায় দেয়া হয়।
তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসির আদেশ দেয়া চিঠি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদিন। তিনি বলেন, ভিসির রুটিন দায়িত্বে থেকে ট্রেজারার এ ধরনের কোন চিঠি অর্থাৎ কাউকে বদলি, পদন্নতি কিংবা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারেননা। এমনকি তিনি ২৫ হাজার টাকার বেশী খরচও করতে পারেননা। অথচ ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বিল তিনি কমিশনের বিনিময় ছাড় দিয়েছেন। এধরনের অনেক অপকর্ম ঢাকতেই তিনি এ সমস্ত অবৈধ আদেশের চিঠি তৈরী করে গেছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্ব বিদ্যালয় একটি অসিস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই তিনি অবৈধভাবে আদেশের চিঠিগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেয়ার পর বিতরন করিয়েছেন। অন্যদিকে আরেক প্রশ্নের জবাবে মুরশীদ আবেদীন বলেন, যাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হল সেই আতিকুর রহমান অর্থ দপ্তরে পদায়ন নেই। অথচ তিনি অবৈধভাবে সেই দপ্তরে বসে বিদায়ী ট্রেজারারের অপকর্মগুলো বাস্তবায়নে সহযোগীতা করেছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ব বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবু জাফর জানান, রুটিন দায়িত্বে থাকা কোন ভিসি কাউকে বদলী, পদন্নতী কিংবা দাপ্তরিক কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে পারেননা। তিনি শুধু দাপ্তরিক কার্য সম্পাদন করবেন। শোকজও করতে পারেননা। ভিসি বিদায়ের আগ মুহূর্তে কাউকে পদন্নতী, বদলী কিংবা চাকুরীচুত্য করার প্রবনোতা একটি খারাপ সংস্কৃতি। যা লেজুরবৃত্তি প্রশাসন সৃষ্টি করে। আর চিঠির জবাব দেয়ার সময় অতিবাহিত করে তা ডেলিভারি দেয়া কখনও সমিচিন নয়। এটা উদ্যেশ্য প্রনোদীত বলে মনে করেন শিক্ষক নেতা আবু জাফর।
Leave a Reply